ফেসবুক নাকি ইউটিউব – কোন সাইটে বেশি ইনকাম? তুলনা ও ইনকামের বাস্তব তথ্য!
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - GenXBangla ব্লগ এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ফেসবুক নাকি ইউটিউব – কোন সাইটে বেশি ইনকাম? তুলনা ও ইনকামের বাস্তব তথ্য! নিয়ে আলোচনা করব।
বর্তমানে মানুষ শুধু বিনোদনের জন্য নয়, আয় করার মাধ্যম হিসেবেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি প্ল্যাটফর্ম হলো ফেসবুক (Facebook) ও ইউটিউব (YouTube)। তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন, "ফেসবুক নাকি ইউটিউব – কোনটা থেকে বেশি ইনকাম হয়?"
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এককথায় দেওয়া যায় না, কারণ ইনকাম নির্ভর করে আপনি কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করেন, কে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এবং আপনার কৌশল কতটা কার্যকর।
এই আর্টিকেলে আমরা ফেসবুক ও ইউটিউবের ইনকামের ধরন, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরব, যাতে আপনি নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত। সেই সাথে এই পোষ্টে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব ফেসবুক ও ইউটিউব কোন প্ল্যাটফর্মে কীভাবে আয় করা যায়, কোথায় কেমন সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।

ফেসবুক নাকি ইউটিউব – কোন সাইটে বেশি ইনকাম?
ফেসবুক নাকি ইউটিউব কোন সাইটে ইনকাম বেশি তা বুঝতে হলে আপনাকে জানতে হবে কোন প্লাটফর্মে কিভাবে ইনকামন করা যায়। এবং কোন প্লাটফর্মে কি ধরণের কন্টেন্ট ভালো চলে তাহলে আপনার কন্টেন্টের সাথে তুলনা করে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনি কোন সাইটে ভিডিও বানালে ইনকাম বেশি হবে।
এজন্য চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক ও ইউটিউবে কি কি মাধ্যমে ইনকাম করা সম্ভব?
ইউটিউব থেকে আয় করার জনপ্রিয় ৫টি উপায়ঃ
১। YouTube Partner Program (AdSense)
১,০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪,০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পূরণ হলে চ্যানেল মনেটাইজ হয়।
এরপর ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রতি ১,০০০ ভিউতে $1–$5 পর্যন্ত আয় সম্ভব (বিষয়ের উপর নির্ভর করে)।
২। স্পন্সরশিপ (Sponsored Content)
চ্যানেল জনপ্রিয় হলে কোম্পানিগুলো ভিডিওতে তাদের প্রোডাক্ট প্রচার করতে অর্থ দেয়।
৩। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ভিডিওতে প্রোডাক্ট রিভিউ করে বা লিংক দিয়ে সেল হলে কমিশন পাওয়া যায়।
৪। নিজের কোর্স বা পণ্য বিক্রি
নিজের ডিজিটাল প্রোডাক্ট (PDF, কোর্স, সফটওয়্যার) বিক্রির বড় সুযোগ।
৫। মেম্বারশিপ ও সুপার চ্যাট
লাইভ স্ট্রিমে দর্শকরা আপনাকে টাকা পাঠাতে পারে, পেইড মেম্বারশিপ কিনে আপনাকে সমর্থন করতে পারে।
ইউটিউব সাইটের কিছু সুবিধাঃ
- দীর্ঘমেয়াদে প্যাসিভ ইনকাম করা যায়
- ভিডিও সার্চে পাওয়া যায়
- গুগলের মালিকানাধীন হওয়ায় স্ট্যাবিলিটি বেশি
- ব্র্যান্ড ভ্যালু ও ভিউয়ার ট্রাস্ট বেশি হয়ে থাকে
ফেসবুক থেকে আয় করার জনপ্রিয় ৫টি উপায়ঃ
১. In-Stream Ads
আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ফেসবুক আপনাকে শেয়ার করে আয় দেয়।
শর্ত: ১০,০০০ ফলোয়ার ও গত ৬০ দিনে ৬ লাখ মিনিট ভিডিও ভিউ হতে হবে।
২. Branded Content (স্পন্সরশিপ)
আপনার ফেসবুক পেজে ফলোয়ার বেশি হলে বিভিন্ন কোম্পানি আপনার পেজে প্রোডাক্ট প্রমোট করতে অর্থ প্রদান করে থাকে।
৩. Facebook Stars
লাইভ স্ট্রিমিং করার সময় দর্শকরা স্টার পাঠায়—যার মাধ্যমে আপনি ইনকাম করতে পারেন।
৪. প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি
নিজের তৈরি পণ্য, সার্ভিস বা অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করে আয় করা যায়।
৫. রিল ভিডিও ও রিলস বোনাস প্রোগ্রাম
ফেসবুক এখন রিলস নির্মাতাদের জন্য বোনাস প্রোগ্রাম চালু করেছে। নির্দিষ্ট ভিউ/এঙ্গেজমেন্ট পেলে ইনসেনটিভ পাওয়া যায় (এটি সিলেক্টেড দেশের জন্য প্রযোজ্য)।
ফেসবুক সাইটের কিছু সুবিধাঃ
- ফেসবুকে কম সময়ে বেশি রিচ পাওয়া যায়
- ভাইরাল কনটেন্টে দ্রুত আয় করা যায়
- ভিডিও ছাড়াও পোস্ট, লাইভ, স্টোরি দিয়েও আয় করা যায়
- পেইড মার্কেটিং করে পেজ দ্রুত গ্রো করা যায়
এখন হইতো বুঝতে পারছেন কি ধরণের ভিডিও কোন প্লাটফর্মে বেশি চলে। অর্থাৎ আপনি যদি ভাইরাল নিশের কোনো কন্টেন্ট নিয়ে ভিডিও বানিয়ে থাকে যেটা ট্রেন্ড খুব অল্প সময় থাকে তাহলে ফেসবুক থেকে ভালো ইনকাম করতে পারবেন। তবে আপনার টপিক যদি এভারগ্রীন টপিক হয় এবং তুলনামূলক ট্রেন্ডি না হয় কিন্তু ব্রান্ডএবল কন্টেন্ট বানান তাহলে ইউটিউব আপনার জন্য বেশি ভালো হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন প্লাটফর্মে কন্টেন্ট মনিটাইজ করা বেশি কঠিন অর্থাৎ ফেসবুক ও ইউটিউবে কন্টেন্ট মনিটাইজ করতে কি ধরণের শর্ত রয়েছে তুলনা করে দেখা যাক।
ইউটিউব বনাম ফেসবুকঃ ইনকাম ও মনিটাইজেশনের তুলনা
বিষয় | ইউটিউব | ফেসবুক |
---|---|---|
মনেটাইজেশন শুরু | ১০০০ সাবস্ক্রাইবার + ৪০০০ ঘন্টা Watch Time | ১০,০০০ ফলোয়ার + ৬ লক্ষ মিনিট Watch Time |
গড় আয় (১০০০ ভিউ) | $1–$3 (নিচে বা উপরে হতে পারে) | $0.25–$1 (ভাইরাল হলে বেশি হতে পারে) |
কনটেন্ট টিকে থাকে | চিরস্থায়ী | সীমিত সময়ের জন্য বেশি ভিউ পায় |
ব্র্যান্ড ভ্যালু | উচ্চ | মাঝারি |
প্যাসিভ ইনকাম | সম্ভব | তুলনামূলক কম |
SEO সুবিধা | বেশি (Google সার্চে আসে) | কম |
কোন প্ল্যাটফর্ম আপনার জন্য সেরা?
আপনি যদি... | তাহলে বেছে নিন |
---|---|
নিয়মিত ভিডিও বানাতে পারেন | ইউটিউব |
ভাইরাল কনটেন্ট বা শর্ট ভিডিও বানান | ফেসবুক |
দীর্ঘমেয়াদে আয় করতে চান | ইউটিউব |
দ্রুত ফলোয়ার ও রিচ চান | ফেসবুক |
কনটেন্ট একসাথে দুই জায়গায় দিতে চান | উভয় (Cross-Posting) |
বাস্তব উদাহরণ ফেসবুক বনাম ইউটিউব
- বাংলাদেশে অনেক ইউটিউবার রয়েছেন যারা প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা বা তার বেশি আয় করছেন শুধুমাত্র অ্যাডসেন্স ও স্পন্সরশিপ থেকে।
- অন্যদিকে, কিছু ভাইরাল ফেসবুক পেজ মাসে ৫০,০০০–৭০,০০০ টাকা আয় করছে শুধু ইনস্ট্রিম অ্যাড, স্পন্সর ও স্টারস থেকে।
- তবে ইউটিউব কনটেন্টগুলো সময়ের সাথে আরও ইনকাম আনে, কিন্তু ফেসবুকে কনটেন্ট খুব দ্রুত পুরনো হয়ে যায়।
আশা করি এই কইটি পয়েন্ট আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন কোন সাইটে ইনকাম বেশি হয়। তবে পুরো কথার সারমর্ম করলে এতোটুক বোঝা যায় ইউটিউবে একটি ভিডিও ভাইরাল কম হয় তবে লংটাইম একটা ভিডিও দিয়ে ইনকাম করা যায়। আর ফেসবুকে ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয় তবে খুব দ্রুত পুরোনো হয়ে যায়।
এজন্য আপনি যদি ট্রেন্ডিং টপিকে ভিডিও বানান ফেসবুকে ভালো ইনকামের সুযোগ রয়েছে এবং এভারগ্রীন টপিকে ভিডিও বানালে ইউটিউব আপনার জন্য বেটার অপশন।
তবে নিজের ব্রান্ডভ্যালু তৈরি করার জন্য আপনি চাইলে একই কন্টেন্ট ফেসবুক ও ইউটিউব দুই প্লাটফর্মেই শেয়ার করতে পারেন। এথেকে আপনি দুই জায়গা থেকেই ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন।
❓ FAQ
প্রশ্ন. ইউটিউব কি নতুনদের জন্য ভালো?
হ্যাঁ, যদি আপনি ভিডিও বানাতে আগ্রহী হন এবং নিয়মিত কাজ করতে পারেন।
প্রশ্ন. ফেসবুকে কি প্রোফাইল থেকেও ইনকাম করা যায়?
না, ইনস্ট্রিম অ্যাডস বা মনেটাইজেশনের জন্য পেজ থাকা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন. ইউটিউব ও ফেসবুক একসাথে চালানো কি উচিত?
হ্যাঁ, একই ভিডিও দুই জায়গায় আপলোড করে আয় বাড়ানো যায়।
প্রশ্ন. ফেসবুকের ইনকাম কি ইউটিউবের মত দীর্ঘমেয়াদে চলে?
না, ফেসবুক কনটেন্ট সাধারণত দ্রুত রিচ পায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ইউটিউব বেশি উপযোগী।
শেষ কথাঃ
ফেসবুক ও ইউটিউব – দুটো প্ল্যাটফর্মেই আয় করার বিশাল সুযোগ আছে। তবে একেকটির ধরন একেক রকম। ইউটিউব হলো ধৈর্য, পরিকল্পনা আর কনটেন্টের গুণমানের খেলা। অন্যদিকে, ফেসবুক হলো ভাইরাল কনটেন্ট, ট্রেন্ড অনুসরণ আর দ্রুত রিচ পাওয়ার জায়গা।
🎯 সঠিক কৌশল আর ধারাবাহিক পরিশ্রম থাকলে দুই জায়গাতেই সফলতা সম্ভব।
আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে ছোট করে ইউটিউব বা ফেসবুক যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করুন। আস্তে আস্তে নিজের ব্রান্ড ভ্যালু বাড়ানোর জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব উভয় প্লাতফর্ম ব্যবহার করুন।
আপনার আসলেই GenXBangla ব্লগ এর একজন মূল্যবান পাঠক। ফেসবুক নাকি ইউটিউব – কোন সাইটে বেশি ইনকাম? তুলনা ও ইনকামের বাস্তব তথ্য! এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url